জুলুম নির্যাতনের পিচ্ছিল পথ ধরেই আসবে সফলতা

Estimated read time 2 min read

জুলুম নির্যাতনের পিচ্ছিল পথ ধরেই আসবে সফলতা

পবিত্র কোরআনের ঘোষণা: ‘অভিযোগ তো হচ্ছে তাদের উপর, যারা মানুষদের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীর বুকে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহের আচরণ করে বেড়ায়; এমন (ধরণের জালেম) লোকদের জন্যই রয়েছে কঠোর আজাব। -সুরা আশ সূরা:৪২

অবশ্যই তাদের কথা আলাদা যারা (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনে ও (সে অনুযায়ী) নেক কাজ করে এবং বেশি করে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে। তাদের ওপর জুলুম করার পরই কেবল তারা (আত্মরক্ষামূলক) প্রতিশোধ গ্রহণ করে; আর যারা জুলুম করে তারা অচিরেই জানতে পারবে তাদের পরিণতি কী হতে যাচ্ছে। -সূরা শুআরা:২২৭

রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। কিন্ত যখন তিনি তাকে গ্রেফতার করেন, তখন আর তাকে ছাড়েন না। অত:পর নবী (সা:) এ আয়াত পাঠ করলেন, “আর তোমার রব যখন কোন জালিম জনবসতিকে পাঁকড়াও করেন, তখন তাঁর পাঁকড়াও এমনই হয়ে থাকে। তাঁর পাকড়াও বড়ই কঠিন, নির্মম ও পীড়াদায়ক।” -বুখারী

‘জেল, জুলুম, নির্যাতন আন্দোলনের প্রশিক্ষণ’ ইসলামী আন্দোলনের সকল পর্যায়ের জনশক্তি এ স্লোগানের সাথে সম্যক পরিচিত। যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে খোদাদ্রোহী ও বাতিল শক্তি দ্বারা জেল, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। “বর্তমান সময়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা যে জেল, জুলুম ও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে তা পূর্ববর্তী নির্যাতনের ধারাবাহিকতা মাত্র। পৃথিবীর শুরু থেকে অদ্যবধি যেখানেই তাওহীদ বা সত্যিকারের কালেমার দাওয়াত উপস্থাপিত হয়েছে সেখানেই সে আন্দোলনের কর্মীদের বাতিলের রোষানলে পড়তে হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) সহ অসংখ্য নবী, রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম, মুজাদ্দিদ, মুজতাহিদ, ঈমাম, মুজাহিদ, দ্বীনের দাঈসহ দেশে দেশে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী অসংখ্য ইসলাম প্রিয় মানুষ আল্লাহর দ্বীনের জন্য অকাতরে নির্যাতন সহ্য করেছেন। জালিমের পাহাড়সম জুলুম-নিপীড়ন ও রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার প্রত্যাশায় সত্য ও ন্যায়ের পথে তারা অটল-অবিচল ছিলেন। জীবনের বড় একটি অধ্যায় তাদের পার হয়েছে ভীতিকর অবস্থা, আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতি, জীবনের হুমকি, মিথ্যা অপবাদ ও অপপ্রচারে সম্মুখীন হওয়ার মধ্য দিয়ে। তবুও তারা আন্দোলনের কাজ থেকে বিন্দুমাত্রও পিছপা হননি। শুধুমাত্র আদর্শগত বিরোধের কারণেই তাদেরকে জালিমের জুলুম ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।

এ বিষয়ে আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে -“তোমরা কি এ কথা মনে করেছো যে, এমনিতেই তোমরা বেহেশতে ঢুকে যেতে পারবে? অথচ এখনও তোমাদের উপর ঐসব অবস্থা আসেনি, যা তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল তাদের উপর এসেছিল। তাদের উপর দিয়ে কঠিন অবস্থা গেছে, বিপদ-আপদ এসেছে, তাদেরকে কাঁপিয়ে তুলেছে, এমনকি শেষ পর্যন্ত রাসূল (সা:) নিজে এবং যারা তাঁর সাথে ঈমান এনেছিলেন তারা চিৎকার করে বলে উঠেছেন যে, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? তখন তাঁদেরকে সান্ত¦না দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটেই”। সূরা বাকারা:২১৪

হযরত খাব্বাব ইবনুল আরাত (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী করীম (সা:) এর নিকট (আমাদের উপর নির্যাতন সম্পর্কে) অভিযোগ করলাম এমন অবস্থায় তিনি তখন তাঁর চাদরটিকে বালিশ বানিয়ে কাবার ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, আমরা তাকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আমাদের জন্য কি দোয়া করবেন না? তখন তিনি বললেন, তোমাদের পূর্বেকার ঈমানদার লোকদের অবস্থা ছিল এই যে, তাদের কারো জন্য গর্ত খোড়া হতো, অত:পর গর্তে নিক্ষেপ করা হতো, অত:পর করাত নিয়ে এসে মাথার উপর স্থাপন করা হতো এবং তাকে দ্বিখন্ডিত করে ফেলা হতো। কিন্তু এত কিছুর পরও তাকে দ্বীন থেকে সরানো যেতনা। কারো শরীর লোহার চিরুনী দিয়ে আচড়িয়ে হাড় থেকে মাংস ও স্নায়ু তুলে ফেলা হতো কিন্তু এতেও তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারতো না। আল্লাহর কসম! অবশ্যই এই দ্বীন পূর্র্ণতা লাভ করবে। এমনকি তখন যে কোন আরোহী সানআ থেকে হাজরা মাউত পর্যন্ত দীর্ঘ পথ (নিরাপদে) পাড়ি দিবে। এ দীর্ঘ সফরে সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবে না এবং মেষ পালের ব্যাপারে নেকড়ে ছাড়া আর কারো ভয় থাকবে না। কিন্তু তোমরা বড়ই তাড়াহুড়া করছে। -বুখারী

মূলত: আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রিয় বান্দাহদেরকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই প্রমাণ করতে হবে তারা কতটুকু আল্লাহ প্রেমিক। মুখে নিজেকে আল্লাহ প্রেমিক বলে জাহির করা খুবই সহজ কিন্তু পরিস্থিতির ভয়াবহতায় বুঝা যায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এবং তার দ্বীনের জন্য দরদ কার কতুটুকু? আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানকে মানব সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে কারা কি পরিমাণ ত্যাগ-স্বীকার করতে প্রস্তুত? অন্যায় ভাবে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যখন কাউকে অভিযুক্ত করে ফাঁসির দন্ডে দন্ডিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন হাসি মুখে ফাঁসির রশি গলায় ঝুলানোর মধ্য দিয়ে সে ব্যক্তির আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট নিজেকে সঁপে দেয়ার বাস্তব সাক্ষ্য প্রমাণিত হয়। আল্লাহ তার বান্দাহদেরকে জুলুম-নিপীড়ন, নির্যাতনের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখেন, কে ঈমানের দাবিতে কতটুকু খাঁটি আর কে কপট। যেমন ওহুদ যুদ্ধের কপট বিশ্বাসীরা ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। বদরের বিজয়ের পর কারা সুবিধাভোগী মুনাফিক তা ওহুদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। জয়ের পর পরাজয়, সুখের পর দুঃখ, আরাম-আয়েশের পর কষ্ট, সম্মানের পর অসম্মানে পতিত করেই সত্যনিষ্ঠ মানুষদের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা যায়। কেননা সুবিধাভোগীরা সবসময় ভালো বা জয়জয়কার অবস্থায় সামনের কাঁতারে থাকতে চায়। কিন্তু বিপদ আসলে তারা নিজেদেরকে আগের চেয়ে গুটিয়ে নেয় কিংবা ভিতর থেকে শুধু অপরের দোষ চর্চায় লিপ্ত হয় কিংবা গোপনে বিরোধী শক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলে এবং নিজেকে বিপদমুক্ত রাখার চেষ্টা করে। ইসলামী আন্দোলনের একজন কর্মীর কাছে যেহেতু দুনিয়ার সফলতা চাইতে আখেরাতের সফলতাই চুড়ান্ত ; সেহেতু দুনিয়ার সাময়িক দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ ও জুলুম-নিপীড়নকে সে পরোয়া করার কথা নয়। দুনিয়ার জুলুম-নিপীড়নকে সে পরকালীন মুক্তির পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করে। দুনিয়ার জালিমের দৃষ্টিতে সে অপরাধী হয়েও শাস্তি ভোগ করলেও মহান আল্লাহর রাব্বুল আলামীনের কাছে সে নিরাপরাধ হয়ে ন্যায়বিচার পাবে এ প্রত্যাশা নিয়েই তাকে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে হবে। কেননা আল্লাহর রাব্বুল আলামীনের ঘোষণা হচ্ছে-‘কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের জন্য একটি মানদন্ড স্থাপন করবো, অত:পর সেদিন কারো ওপরই কোনো রকম জুলুম হবেনা; যদি একটি শস্য দানা পরিমাণ কোনো আমলও (তার কোথাও লুকিয়ে) থাকে, (হিসাবের পাল্লায়) তা আমি সামনে এনে হাজির করবো। হিসাব নেয়ার জন্য আমিই যথেষ্ট। সুরা আল আম্বিয়া:৪৭
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে দ্বীন বিজয়ের দায়িত্ব দিয়ে রাসূল (সা:) কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন যে দ্বীনকে বিজয়ী করতে গিয়ে আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। রাসূল (সা:) কে গনক ও পাগল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। আবু লাহাব ও তার স্ত্রী আল্লাহর রাসূলের চলার পথে প্রতিনিয়ত কাঁটা বিছিয়ে রাখত, নামাজরত অবস্থায় প্রিয় নবীর গলায় উটের নাড়িভুড়ি পেঁচিয়ে দিত। একবার কতিপয় কুরাইশ নেতা কাবা ঘরের ভিতরে রাসূল (সা:) এর গলায় ফাঁস লাগিয়ে এভাবে টান মারল যে, তিনি শাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করার অবস্থা সৃষ্টি প্রায়। কাবাঘরে নামায পড়ার সময় আবু জেহেল আল্লাহর রাসূল (সা) কে পাথর মেরে হত্যা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। পরিকল্পনা মোতাবেক আবু জেহেল পাথর খন্ড নিয়ে আল্লাহর রাসূলের কাছে আসার পর ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগল। আবু জেহেলের এ অবস্থা দেখে তার অনুসারীরা তার কাছে এলে সে বলল, ‘আমি মুহাম্মদের প্রতি অগ্রসর হতেই দেখি একটি বিশাল উট আমার ও মুহাম্মদের মাঝখানে ভয়ংকর দাঁত বের করে আমাকে খেতে এগিয়ে এলো। আমি আর কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করলে তোমরা আমাকে জীবিত পেতে না’।
সামাজিকভাবে বয়কটের শিকার হয়ে ৩ বছর যাবৎ রাসূল (সা:) ও তার সাহাবীদেরকে শিয়াবে আবু তালেবে বন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়েছে। বয়কট থাকাকালীন খাদ্য দ্রব্যের অভাবে ক্ষুধায় রাসূল (সা:) ও সাহাবীদেরকে গাছের পাতা, পাতা শেষ হয়ে গেলে গাছের ছাল, তা শেষ হয়ে গেলে উটের চামড়া দিয়ে তৈরি তাঁবুগুলোর অংশ বিশেষ কেটে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত্তির প্রয়াস চালাতে হয়েছে। ইসলাম প্রচারের জন্য রাসূল (সা:) তায়েফ গেলে সেখানকার সর্দাররা গুন্ডা প্রকৃতির লোকজনকে লেলিয়ে দিয়ে পাথরের পর পাথর মেরে রাসূল (সা:) এর দেহকে রক্তে রঞ্জিত করে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছিল। মক্কার কাফিররা রাসূল (সা:) কে সম্মিলিত ভাবে হত্যা করার সিদ্ধান্ত হলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রিয় রাসূল (সা:) কে প্রিয় জন্মভূমি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার নির্দেশ আসে। ওহুদের ময়দানে আল্লাহর রাসূল (সা:) কাফেরদের দ্বারা আক্রান্ত হলে আবু তালহা সহ কতিপয় সাহাবী জীবনবাজি রেখে নিজেদেরকে ঢালের মতো রেখে আল্লাহর রাসূল (সা:) প্রতি নিক্ষিপ্ত বর্ষা থেকে তাকে রক্ষা করেন। তারপরও ওহুদের ময়দানে কাফেরদের আঘাতে রাসূল (সা:) এর দাঁত শহীদ হয়। কাফিরদের মোকাবিলায় ওহুদ যুুদ্ধের আহত সাহাবীরা আহত অবস্থায়ও জিহাদের ময়দানে ছুটে গিয়েছেন। আহতরা একে অপরের কাঁধে ভর করে জিহাদের ময়দানে যাওয়ার বিবরণ কুরআনে এভাবে এসেছে- “(ওহুদের এতো বড়ো) আঘাত আসার পরও যারা আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দিয়েছে, তাদের মধ্যে যারা সৎ, নেককার ও মুত্তাকী তাদের জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান। আর যাদেরকে লোকেরা বলল, তোমাদের বিরুদ্ধে বিরাট সেনা সমাবেশ ঘটছে। তাদেরকে ভয় করো, তা শুনে তাদের ঈমান আরও বেড়ে গেছে এবং তারা জবাবে বলেছে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি সবচেয়ে ভাল কার্যোদ্ধারকারী”। সুরা আলে ইমরান:১৭২-১৭৩

এছাড়া আল্লাহর নবী নূহ (আ:) কে পাথর মেরে হত্যার হুমকি, সুলাইমান (আ:) কে জাদুকর হিসাবে আখ্যায়িত করা, ইব্রাহীম (আ:) কে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা, ইউসুফ (আ:) এর প্রতি মিথ্যা অভিযোগ ও কারাগারে প্রেরণ, জাকারিয়া (আ:) কে করাত দ্বারা মাথা দ্বিখন্ডিত করে হত্যা করা, ঈসা (আ:) কে শূলে চড়ানো এবং মূসা (আ:) কে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা সহ অসংখ্য নবী-রাসূলকে তার কওমের জনপদের লোকদের দ্বারা হত্যা ও নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে। সত্য পথে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অবিচল থাকতে গিয়ে নির্মম ও নিষ্ঠুর ভাবে শহীদ হতে হয়েছে রাসূল (সা:) এর প্রিয় সাহাবী খুবাইব (রা) কে। খুবাইব (রা:) এর হস্তদ্বয় পিঠমোড়া করে বেঁঁধে যখন ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন একদিকে মক্কার নারী-পুরুষেরা তাঁকে ধাক্কা দিতে দিতে ফাঁসির মঞ্চে নিচ্ছিল অন্যদিকে জনতার করতালি এ নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডকে উৎসবে পরিণত করে। ফাঁসির মঞ্চে বসার আগে তিনি বললেন, ‘তোমরা আমাকে দু’রাকাত নামাজ আদায় করার সুযোগ দাও অতঃপর হত্যা কর। তারা নামাজ আদায়ের সুযোগ দিলে খাব্বাব (রা:) খুব স্বল্প সময়ে নামাজ আদায় করে বললেন, আল্লাহর শপথ! তোমরা যদি এ ধারণা না করতে যে, আমি মৃত্যুও ভয়ে নামাজ দীর্ঘ করছি তাহলে আমি আরও বেশি সময় নিয়ে নামাজ আদায় করতাম। নামাজ আদায়ের পর তারা জীবিত অবস্থায় খুবাইব (রা:) এর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো একের পর এক বিচ্ছিন্ন করতে বলে, ‘তুমি কি চাও, তোমাকে ছেড়ে দিয়ে তোমার পরিবর্তে মুহাম্মদকে হত্যা করি? রাসূল প্রেমিক খুবাইব এই করুণ অবস্থার মধ্য দিয়েও উত্তর দিলেন, ‘আল্লাহর শপথ আমি মুক্তি পেয়ে আমার পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে যাব, আর রাসূল (সা:) এর গায়ে কাঁটার আচড় লাগবে, তা হতে পারেনা’। সাথে সাথে নরপিশাচরা চিৎকার করে বলে উঠল, তাকে হত্যা কর, তাকে হত্যা কর’। এমতাবস্থায় ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলন্ত খুবাইব (রা:) এর উপর হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল কাফিররা। তীর বর্ষা আর খুরের আঘাতে আঘাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।

রাসূলের প্রিয় সাহাবী হযরত বেলাল (রা) এর নির্যাতনের ঘটনা নি:সন্দেহে আমাদের কারোই অজানা নয়। ইসলাম গ্রহণ করার কারণে তার মুনিব প্রচন্ড গরম বালুর উপর শুইয়ে দিয়ে তার বুকে পাথর চাপা দেয়া সত্বেও তিনি ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ বলা বন্ধ করেননি। সুদর্শন যুবক মাসয়াব বিন উমাইরকে দ্বীনের দাওয়াত কবুল করতে গিয়ে সকল সহায় সম্পদ হারিয়ে বিলাসবহুল জীবন যাপনের পরিবর্তে কষ্টকর জীবন-যাপনকে বাছাই করে নিতে হয়েছে। শরীরে কাঁটা ঢুকিয়ে নির্যাতন করায় দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়েছিল রাসূলের প্রিয় সাহাবী আমের বিন ফাহিরার। পানিতে ডুবিয়ে নির্যাতন করা হয় আমেরকে আর তাঁর মা সুমাইয়া (রা:) কে লজ্জাস্থানে বর্ষা নিক্ষেপ করে শহীদ করা হয়। খাব্বাব (রা:) কে জ্বলন্ত অঙ্গারে শুইয়ে রাখার এক পর্যায়ে তাঁর চর্বিতে আগুন নিভে যেত। ওহুদের ময়দানে আল্লাহর রাসূল (সা:) এর চাচা হামজা (রা:) এর কলিজা চিবিয়ে খাওয়া হয়েছে। জায়েদ বিন দাসনাকে বলা হলো ‘তোমার পরিবর্তে মুহাম্মদকে শূলে চড়ালে তুমি কি সহ্য করবে’? তিনি জবাব দেন ‘তাঁকে শূলে চড়ানো তো দূরের কথা তাঁর পায়ে কাটার ফোঁটাও সহ্য করব না। এ কথা শোনার পর তাঁর উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানোর এক পর্যায়ে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। কারাগারে নিক্ষেপ সহ অবর্ণনীয় জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ইমামে আজম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া। নানা ধরণের জুলুম নির্যাতন ভোগ করেছেন সাইয়েদ আহমদ বেরেলভী, সাইয়েদ নিসার আলী তিতুমীরসহ আরও অনেকে।

বিংশ শতাব্দীতে এসে সত্য ও ন্যায়ের পথে বলিষ্ট ভূমিকা রাখার কারণে মিশরে শহীদ হন হাসানুল বান্না ও সাইয়েদ কুতুব। কারাবরণ সহ নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে সাইয়েদ কুতুবের ভাই-বোনসহ পরিবারের আরো অনেক সদস্যকে। সাইয়েদ কুতুবের ছোট ভাই মোহাম্মদ কুতুব, বোন হামিদা কুতুব, আমিনা কুতুব ও নাফীসা কুতুবকে গ্রেফতার সহ বর্ণনাতীত নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কারাগারে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেন আমিনা কতুবের স্বামী কামাল ছানানী। নাফীসা কুতুবের রড় ছেলে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিফাতকে গ্রেফতার করে তার মামা সাইয়েদ কুতুবের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে নির্যাতন করা হলেও কিন্তু তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়ায় এক পর্যায়ে কারাগারের চার দেয়ালের ভিতরই তিনি শহীদ হন। নির্যাতনের শিকার হন উস্তাদ ওমর তিলমিসানী, আব্দুল কাদের আওদাহ, যয়নাব আল গাজ্জালী ও তুরস্কের বদিউজ্জামান নুরসী। তুরস্কের ইস্তাম্বুলের প্রতিটি লইটপোস্টের সাথে ইসলামপ্রিয় মানুষদের লাশ ঝুলেছিল অনেকদিন। দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে গিয়ে বার বার কারা নির্যাতন সহ্য করেছেন আলজেরিয়ায় আব্বাস মাদানী, শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ দায়ী ইলাল্লাহ সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী। যদিও একবার তার ফাঁসির আদেশ হয়েছিল পরে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ফলে তাঁর ফাঁসি কার্যকর করতে পারেনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। ফাঁসির রায় শুনেও যিনি ছিলেন পাহাড়ের মত অটল। ফাঁসির পোশাক পরিধান করার পর যাকে সরকারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার প্রস্তাব দেয়া হলে তিনি বলেছিলেন, “হায়াত আওর মওত কা ফয়সালা আসমান পর হোতা হ্যায়, জমিন পর নাহী। ইস্ বাতিল হুকুমতকে সামনে মাফী মাঙ্গনে কা মতলব হীয়ে হ্যায় কেহ, আল্লাহর মুঝে শাহাদত জেসী উচ্চ মরতবা দেনা চাহ্তো হেঁ, আওর মাই উস্ছে রুগর দানী কারবাহা হোঁ”। অর্থাৎ জীবন ও মৃত্যুর ফয়সালা আসমানে থেকে হয়; জমিন থেকে নয়। এই জালিম সরকারের কাছে ক্ষমা চাওয়ার অর্থ হলো আল্লাহ আমাকে শহীদের মর্যাদা দিতে চান আর আমি তা প্রত্যাখ্যান করতে চাচ্ছি। ১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে মিলনায়তলে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখার অপরাধে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আব্দুল মালেক কে ইটের উপর মাথা রেখে আরেকটি ইট দিয়ে মাথা চুর্ণবিচুণর্ করে মারাত্মক আহত করা হলে ১৫ আগস্ট তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সন্ত্রাসীরা পৈশাচিক কায়দায় হামলা চালিয়ে ৪ জন মেধাবী ছাত্র নেতা সাব্বির আহমদ, আব্দুল হামিদ, আইয়ুব আলী ও আব্দুল জব্বারকে নির্মমভাবে শহীদ করে। ১৯৮৫ সালের কলকাতার হাইকোর্টে কুরআন বাজেয়াপ্ত করা জন্য মামলা দায়েরের প্রতিবাদে ১১ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিবাদ মিছিলে কুরআন বিদ্বেষী খুনী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লার নির্দেশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৮জন ছাত্র-জনতাকে শহীদ করে। সে শহীদের কাতারে ছিলেন ১০ম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মতিন, রাশিদুল হক, ৯ম শ্রেণির ছাত্র শীষ মোহাম্মদ, ৮ম শ্রেণির ছাত্র সেলিম আর ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র শাহাবুদ্দিন। তৌহিদী জনতার মধ্যে থেকে শহীদ হয়েছেন কৃষক আলতাফুর রহমান, রিক্সা চালক মোক্তার হোসেন ও রেলশ্রমিক নজরুল ইসলাম।

একাবিংশ শতাব্দীতে এসে ইসলাম বিরোধী শক্তি নব উদ্যোমে ইসলামী শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য নানা কুটকৌশল অবলম্বন করছে। ইসলাম পন্থীরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে অগ্রসর হচ্ছে ততই হওয়ার চেষ্টা করলেও তারা এ শক্তিকে উগ্র, জঙ্গী, মৌলবাদী, সম্প্রদায়িক শক্তি, মানবতাবিরোধী ও সন্ত্রাসী বলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের সমর্থনের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিপ্লব সংঘটিত হলেও সে বিপ্লবকে নানা কায়দায় তারা বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। আধিপত্যবাদী শক্তি সর্বদা গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে মুখে ফেনা তুলে চললেও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যখন ইসলাম পন্থীরা ক্ষমতার মসনদে বসে তখন তারা তা মেনে নিতে পারে না। তাদের কাছে তখন গণতন্ত্রের মূল্য অর্থহীন তাই তারা ইসলাম পন্থীদের উত্থান ঠেকানোর জন্য অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতার মসনদে নিয়ে আসার জন্য তৎপর শুরু করে। ইসলামী আদর্শের বিপরীতে তারা সামরিক শাসককে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে থাকে। যেকোন মূল্যে ইসলাম পন্থীদের উত্থান ঠেকানোই হচ্ছে তাদের মূল লক্ষ্য। ইসলামী শক্তিকে নির্মুল করার ক্ষেত্রে দমন নিপীড়নের ফর্মুলা বিশ্বের সকল দেশে একই পদ্ধতির। বর্তমান পৃথিবীর কিছু দেশে সত্যপন্থী মানুষদের উপর জুলুম-নির্যাতনের বিভিষীকাময় কিছু ঘটনা জানার পর মনে হয়েছে অতীতের জালিমদের সাথে বর্তমান জামানার জালিমদের জুলুমের মধ্যে অদ্ভুত মিল রয়েছে। জালিম সব জায়গাতে একই রূপে আবির্ভূত হয়। জালিমরা পৃথিবী বিভিন্ন দেশের অধিবাসী হতে পারে কিংবা তাদের নাম বা ভাষার সাথে পার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু তাদের জুলুমের কারণ, ধরণ ও চরিত্র অনেকাংশে অভিন্ন। সময়ের আবর্তনে জুলুম-নিপীড়নের নিত্য নতুন কৌশল ব্যবহার করলেও সকল জালিমই ক্ষমতা কুক্ষিগত বা দীর্ঘায়িত করার জন্য সর্বদা সত্যপন্থী আপসহীন মানুষগুলোকে নির্যাতন করে আসছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুসলমানেরা এ ধরনের জুলুমের শিকার কেবলমাত্র অমুসলিমদের দ্বারাই হচ্ছেনা বরং পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশে কিছু মুসলিম নামধারী শাসকের হাতেও চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেক সত্যপন্থী মানুষ। এ সকল দৃশ্যপটকে সামনে রেখে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন। পূর্বসূরীদের দেখানো পথ ও পদ্ধতি অনুযায়ী বর্তমান ইসলাম বিরোধী ক্ষমতাসীন আওয়ামী শক্তি বাংলাদেশের ইসলাম পন্থীদের উত্থান ঠেকানোর জন্য নতুন নতুন এজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ৯০ ভাগ মুসলমানদের দেশে তৌহিদী জনতার ঈমান আকিদার সাথে সম্পৃক্ত ইসলামী দলগুলোর অগ্রযাত্রা তারা কোনভাবেই সহ্য করতে পারছে না।

বাংলাদেশের ইসলামী আদর্শের সঠিক প্রতিনিধিত্বকারী প্রায় সকল ইসলামী সংগঠনগুলো বর্তমান ইসলাম বিরোধী আওয়ামী সরকারের রোষানলের শিকার হয়েছে বা হচ্ছে। তবে সরকারের ধারাবাহিক জুলুম-নিপীড়ন, অবিচার, অপপ্রচার ও অপবাদের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী । এ দুটি শক্তিকে বাংলাদেশে ইসলাম রক্ষার দেয়াল বলা হয়। গত ৫বছরে এ শক্তিকে দমন করার জন্য সরকার এ আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের উপর অব্যাহত ভাবে আইনশৃংখলা বাহিনী দিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে আসছে। তার পাশাপাশি তাদের দলীয় ক্যাডার ও সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আন্দোলনের কর্মীদের বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এ কাফেলার অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সীমা ইতোমধ্যে অতিক্রম হয়ে গেছে। আল্লাহর দ্বীনকে গালিব করার প্রত্যয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ী তৌহিদ প্রেমিক ছাত্রজনতার আন্দোলনকে স্তব্দ করে দিতে পরিচালনা করা হয়েছে কখনো চিরুনী অভিযান, কখনো স্টিং অপারেশন কখনো বা যৌথ বাহিনীর অভিযান। এ সকল অভিযানের নামে গ্রেফতার করা হয়েছে হাজার হাজার ইসলাম প্রিয় ছাত্রজনতাকে। সরকারের হাজার হাজার মিথ্যা মামলায় নির্মম জুলুম-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন মাসের পর মাস বছরের পর বছর। রিমান্ডের নামে বর্বরোচিত কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে হাজার হাজার আল্লাহর দ্বীনের সৈনিককে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য দেয়া হয়েছে বিদ্যুতায়িত চেয়ারে বসিয়ে ইলেক্ট্রিক শট। অনেক যবুকের হাতকে মুছড়িয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। টেবিলের উপর উপুড় করে পোল বাহুর উপর পা দিয়ে চেপে ধরে দু‘হাত ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে অগণিত শিবির কর্মীর। পায়ের তালুতে মোটা বেথের লাঠির অব্যাহত আঘাতে তাৎক্ষণিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন অনেক কিশোর, যুবক ও দাঁড়ি পাঁকা বৃদ্ধ মানুষ। প্রচন্ড শীতের রাতে শত শত শিবির কর্মীর শরীর থেকে জামা-কাপড় খুলে নিয়ে মাথায় পানি ঢেলে নির্যাতন করা হয়েছে। থানা গারদ পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে প্রচন্ড শীতের মধ্যেও কিছুটা উষ্ণতা নেওয়ার জন্য থাকা নোংরা ও বিদঘুটে গন্ধের কম্বলগুলো বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। একদিকে প্রচন্ড নির্যাতনের ফলে পুরো শরীরে প্রচন্ড ব্যথা অপর দিকে তীব্র শীতকেও সহজভাবে মানিয়ে নিয়েছে আন্দোলনের কর্মীরা। কার সেবা কে করবে, কার আঘাতের জায়গায় কে মলম লাগাবে, সবারতো একই অবস্থা। রিমান্ডে পুলিশী নির্যাতেেনর ফলে অনেক কর্মীর মাসের পর মাস দাঁড়াতে পারেননি। ২/৩ জনের কাঁধে ভর করে হাটতে হয়েছে টগবগে অসংখ্য যুবককে। কোমর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে আন্দোলনের অনেক নিবেদিত প্রাণ কর্মীর। গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়ে থানা গারদে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে অনেক জামায়াত শিবির নেতাকর্মীকে। যে বর্বর নির্যাতন পুলিশ বাহিনী জামায়াত-শিবির কর্মীদের উপর চালিয়েছে সে রকম নির্যাতনের সিকিভাগও হত্যা মামলা, অস্ত্র মামলা, নারী ধর্ষণ মামলা, মাদক মামলাসহ অনেক জঘন্য মামলার আসামীদের করা হয়নি। তাদের কাছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ছিল সবচেয়ে বড় আসামী। রিমান্ডের নামে এ বর্বর নির্যাতন অনেককেই সহ্য করতে হয়েছে দিনের পর দিন। গ্রেফতার ও রিমান্ডকে পুলিশ বাণিজ্য হিসাবে নিয়ে যত্রতত্র থেকে গ্রেফতার করেছে অসংখ্য কর্মীকে। বাসা-বাড়িতে রাতের অন্ধকারে হানা দিয়ে ঘুম থেকে তুলে গ্রেফতার করে নিয়ে এসে মিথ্যা মামলায় আসামী বানিয়ে আবার দিনের পর দিন রিমান্ডের নামে নির্যাতন চালিয়ে আন্দোলনের কর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া সহ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করার পরিকল্পনা তাঁরা গ্রহণ করেছিল। ৮ম শ্রেণির ছাত্র থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউই পরিকল্পিত ভাবে পরিচালিত এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস থেকে বাদ পড়েননি। গ্রেফতার ও রিমান্ডের পর শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপে কারাগারের নির্যাতন। কারাগারের সকল নিয়ম কানুন যেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের জন্য শতভাগ বলবৎ যোগ্য। খুনী, সন্ত্রাসী, চোর, ডাকাত, মাদক ব্যবসায়ী, অস্ত্রবাজসহ বহু ক্রিমিনাল মামলার আসামীদের জন্য কারাগারের নিয়ম-কানুনের কোন বালাই নেই। যার যেখানে খুশি সেখানে থাকার, যাওয়ার ঘুরাফেরা করার অধিকার বা সুয়োগ আছে। কিন্তু সরকারের নির্দেশে কারা কর্তৃপক্ষ সারাদেশের প্রায় সব কারাগারে জঘন্য আচরণ করছে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের সাথে। এক্ষেত্রে অবিচারের সীমা অতিক্রম করেছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। যেহেতু জামায়াত-শিবিরের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মামলার ধরণ ছিল বিস্ফোরক ও ভাংচুর মামলা সেহেতু এ মামলার বন্দীদের জন্য অন্যান্য বন্দীদের মত সুযোগ সুবিধা দেওয়ার বা নেওয়ার সুযোগ নেই। গাড়ী ভাংচুর মামলার আসামীরা তাদের ভাষায় হত্যা মামলা, অস্ত্র মামলা ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের চেয়েও ভয়ংকর। এ অজুহাতে দিনের পর দিন ‘আমদানী’ নামক কারাগারের সবচেয়ে কষ্টের জায়গায় জামায়াত শিবির নেতা-কর্মীদের রাখা হয়েছে যেখানে ১ দিন থাকার চেয়ে ১৫ দিন অতিরিক্ত জেল খাটা ভালো। ছোট ছোট সেল যেখানে ৩ জন থাকাও কষ্টকর সেখানে রাখা হতো ৬ থেকে ৭ জনকে। একত্রে নামাজ পড়ার সুযোগও সেখানে ছিল না। ৫০ জনের থাকার জায়গায় রাখা হতো ২০০ থেকে ২৫০ জনকে। বাথরুম ছিল মাত্র ১টি যা অনেকটা কারা কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাকৃত আয়োজন। গোসলের সুবিধা নেই, বের হবার সুবিধা নেই, শোবার সময় এক কাত হয়ে শোয়া তার উপর কারাগারের কম্বলের বিদঘুটে গন্ধ সহ্য করতে শুরুতে অনেক কর্মীর জন্য কষ্ট হয়ে গিয়েছিল। রিমান্ডে শারীরিক নির্যাতনের পর এটা মনে হত আরেক বড় ধরণের মানসিক নির্যাতন। কারাগারের প্রায় সকল কাজ কয়েদী (সাজাপ্রাপ্ত আসামী) দ্বারা সম্পাদিত হয় বিধায় তাদের অশালীন আচরণ ছিল আরেক বড় যন্ত্রণার । বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়–য়া ছাত্রদের সাথে তারা প্রতিনিয়ত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য আচরণ করত। যেটি ভোক্তভোগী ছাড়া লেখার মাধ্যমে বুঝানো অনেকটা অসাধ্য। কোর্টে হাজিরার দিন ছোট একটি প্রিজন ভ্যানে যেখানে ১০ জন উঠাও কষ্টকর সে ভ্যানে তোলা হত ৫০ জনকে। মানুষের সাথে মানুষ এমন অমানবিক আচরণ করতে পারে এটা বাস্তবে না দেখলে বুঝা কঠিন হবে। কারা বিধি অনুযায়ী বড় বড় সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে ডান্ডাবেড়ী পরানোর নিয়ম থাকলেও জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের নিয়মবহির্ভূত ভাবে ডান্ডাবেড়ী পরানো হয়েছে। একজন জনশক্তি ৪ থেকে ১৫/১৬ টির মত মামলা জামিন করিয়ে যখন কারাগার থেকে মুক্ত আকাশে বের হবে তখন আবার সরকারি নির্দেশে পুনরায় জেল গেট থেকে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। একবার দু‘বার নয় অনেক জামায়াত শিবির নেতাকর্মীকে ১০/১২ বারের মত কারা ফটক থেকে পুনরায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। এত কষ্ট আর নির্যাতনকেও আন্দোলনের কর্মীরা গ্রহণ করেছেন স্বাভাবিক ভাবে।

যে কারা কর্তৃপক্ষ শুরুতে জামায়াত-শিবির ভয়ংকর রুপে জানত বা তাদেরকে সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছিল সে কর্তৃপক্ষ দিনে দিনে জামায়াত-শিবিরের শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ, পারস্পারিক ভালোবাসা দেখে বিমোহিত হয়ে যেত। একজনের অসুস্থতায় আরেকজন রাত জেগে সেবা করা, একজনের খাবার ৪/৫ জন ভাগ করে খাওয়া, একজনের শোয়ার জায়গায় আরেকজনকে দিয়ে দেওয়া এরকম আচরণ আসামীদের কাছ থেকে পাওয়া তাদের জন্য ছিল আকাশ কুসুম কল্পনার মত। শিবির কর্মীদের তারা দেখতো ৫ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে পড়তে, দিনের বেশির ভাগ সময় কোরআন তেলাওয়াত করতে, আর শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে আল্লাহর কাছে হাত তুলে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কান্নাকাটি করতে। যার ফলে ধীরে ধীরে গোটা কারাগার জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছিল। গ্রেফতার, মামলা, রিমান্ড আর নির্যাতন করেই জুলুম-নিপীড়নের অধ্যায় ইসলাম বিরোধী শক্তি শেষ করেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গুম করা হয়েছে আন্দোলনের নেতা-কর্মীদেরকে। আজও আমরা খুঁজে পাইনি আমাদের প্রিয় ভাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আল মোকাদ্দাস, ওয়ালীউল্লাহ ও ঢাকা মহানগরী পশ্চিম শাখার সদস্য হাফেজে কুরআন জাকির হোসেনকে। পুলিশ ক্রসফায়ার নামক নাটক সাজিয়ে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে আমাদের প্রিয় ভাই হাফিজুর রহমান শাহীন, আমিনুর রহমান সহ অনেক সম্ভাবনাময়ী দ্বীনের সৈনিককে। এত কিছুর পরও বাতিল শক্তি দ্বীনের মশাল বহনকারী এ কাফেলাকে দমাতে পারেনি। বরং জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে করে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা দেশের তৌহিদী জনতার মনের গভীর ভালবাসার জায়গাটিকে জয় করে নিয়েছে।

একদিকে জামায়াত-শিবিরকে দমন করার জন্য সরকার যখন তাদের নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতনের স্টীম রোলার চালাচ্ছে তখন ইসলামের নামে কাজ করা তাবলীগ, মাজার পন্থী, দেওয়ানবাগী, তরীকত পন্থী, পীরপন্থীদের কার্যক্রম নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষী আওয়ামী সরকারের কোন মাথাব্যথা নেই। বাঁধাতো দূরের কথা অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের কার্যক্রমকে এগিয়ে নেবার জন্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। যে দেশে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ লক্ষ লোকের সমাগম তাবলীগ জামায়াতের ব্যানারে হয় এবং সরকার তা বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠক করে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে সেদেশে অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর ১০-১৫ জনের জমায়েতকেও সরকার সহ্য করতে পারছে না। মাজারপন্থী, পীরপন্থী, তরীকতপন্থী, দেওয়ানবাগীদের ইসলাম আওয়ামী লীগের জন্য আশির্বাদ। তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে ইসলামের খাদেম রুপে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে আসছে। মূলত: ঐ দলগুলোর কার্যক্রম তাদের ক্ষমতার জন্য কোন চ্যালেঞ্জ নয় বিধায় তারা তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে কিংবা কখনো কখনো তাদেরকে জামায়াত ও শিবিরের তুলনায় ইসলামের সঠিক প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসাবে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। জামায়াত-শিবির বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সঠিক প্রতিনিধিত্বকারী ইসলামী সংগঠন বলে তার কার্যক্রমকে তারা বিন্দুমাত্র ও সহ্য করতে পারছে না।

যে বই ও সাহিত্য পড়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা নিজেদের নৈতিক চরিত্র গঠন করে সৎ ও যোগ্য নাগরিকের সংকট পূরণে ভূমিকা রাখছে সে বই গুলোকে সরকারের নির্দেশনায় বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গী বই রুপে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করছে। শিবিরের মেসে বা বাসা-বাড়িতে হানা দিয়ে তারা জঙ্গী বইয়ের সন্ধান পায়। এমনকি মিডিয়ায় প্রদর্শিত বইয়ের তালিকায় কুরআন-হাদীসের বইকেও তারা জিহাদী বই রুপে চিত্রায়িত করছে। আজ পর্যন্ত কোন বইগুলো পড়া নিষিদ্ধ বা জিহাদী বই তার কোন তালিকা সরকার করেনি বা জনগণকে জানাতে পারেনি। আসলে তাদের মূল চরিত্র হল তারা ভালো মানুষ চায় না বা ভালো মানুষ কারো দ্বারা তৈরী হোক তাও তারা সহ্য করতে পারছে না। আজকে যেভাবে পুলিশ তন্ন তন্ন করে দেশের আনাচে কানাচে শিবির খোঁজার জন্য মরিয়া সেই পুলিশ কিন্তু মদ, গাজা, ফেনসিডিলের আসর খোঁজার জন্য তেমন তৎপর নয়। তাদের কাছে মদ, গাজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা ট্যাবলেট, নগ্ন-সিডি ভিসিডি, ম্যাগাজিন কোন বিপদের কারণ নয়। কারণএ জগতের সাথে সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠী আর যাই হোক জামায়াত-শিবির হবে না। যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পরিকল্পিত ভাবে সরকারের নির্দেশে দেশের ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জঙ্গী বানানোর চেষ্টা করছে, শিবিরের মেসে বোমা পাওয়া বা বোমা তৈরীর সরঞ্জাম পাওয়া গিয়েছে বলে মিডিয়ার কাছে বলছে সে শিবিরের মেসে মদ, গাজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা ট্যাবলেট, নগ্ন সিডি-ভিসিডি, ম্যাগাজিন উদ্ধারের কোন খবর পুলিশ মিডিয়ার সামনে দিতে পারছে না কেনো ? বাংলাদেশের শতভাগ মানুষ এখন জানে পুলিশের চরিত্র কেমন? জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে পারলে প্রমোশন হবে সেজন্য জামায়াত-শিবির ধরার অভিযান সফল প্রমাণ করার জন্য তারা অভিযানের সময় সাথে করে বোমা তৈরির সরঞ্জাম বা কখনো কখনো বোমা সাথে নিয়ে যায়। জনগণকে শিবির- জামায়াতের ব্যাপারে পরিকল্পিতভাবে ভুল মেসেজ দেওয়ার জন্য সরকারের নির্দেশে বা কখনো কখনো অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা স্বপ্রনোদিত হয়ে এ কাজগুলো করে যাচ্ছেন। তবে আশার দিক হচ্ছে দেশের জনগণ নৈতিকতা বিবর্জিত এ বাহিনীর অভিযানের নামে নাটককে বিশ্বাস করছে না। কেননা দেশের মানুষ আজ জানে বোমবাজদের চরিত্র কেমন আর ভালো ছেলেদের চরিত্র কেমন ?

সরকারের দীর্ঘ ৫ বছরে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করেছে প্রায় ২৫ হাজার নেতা-কর্মীকে। মিথ্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে প্রায় ৫ লক্ষাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে। পুলিশি নির্যাতনে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন আমাদের কাফেলার অনেক প্রিয় মুখ। এছাড়া আওয়ামী সরকারের সর্বাধিক জুলুম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী। যিনি কেন্দ্রীয় সভাপতি থাকাকালীন সময়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন। শতাধিকের মত মামলায় আসামী করে যাকে ৫০ দিন রিমান্ডে নিয়ে অবর্ণনীয় ও পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। একজন টগবগে যুবককে নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছর যাবৎ কারাগারের বন্দী থাকা অবস্থায় তিনি এখনও স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। হুইল চেয়ারে করে তাতে আদালতে নিয়ে আসা হচ্ছে। চলৎ শক্তিহীন একজন যুবককে ডান্ডাবেড়ী পরিয়ে আদালতে আনা হয়। সরকারের জুলুম নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ছাত্রশিবিরির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সেলিম উদ্দিন, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ড. রেজাউল করিম ও ডা. ফখরুদ্দিন মানিক। বর্তমান কারাবন্দী পরিষদের অনেক সদস্য ভাইকেও নির্মম নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে।

আমাদেরকে ছেড়ে জান্নাতের সুগন্ধি প্রাপ্ত হয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন অনেক বীর মুজাহিদ। কি অপরাধ করেছি আমরা? কেন আমাদের উপর এত প্রতিহিংসার দাবানল জ্বলছে? আমরা তো সমাজের কোন ক্ষতিকর কাজের সাথে সম্পৃক্ত নই। আমরাতো আমাদের মা-বাবা, পরিবার-পরিজনের চক্ষুশীতলকারী সন্তান ও আপনজন। কেন বাতিল শক্তি আমাদের সহ্য করতে পারছে না? হ্যাঁ, আমরাও জানি কেন বাতিলের সাথে আমাদের দ্বন্দ চলছে। কেন ইসলাম বিদ্বেষী আওয়ামী অপশক্তি আমাদের সহ্য করতে পারছে না। আমাদের অপরাধ হচ্ছে মহান আল্লাহর ভাষায় “তারা এ (ঈমানদারদের) দের কাছ থেকে এ ছাড়া অন্য কোনো কারণে প্রতিশোধ গ্রহণ করেনি যে, তারা এক পরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর উপর ঈমান এনেছিলো”। সূরা বুরুজ:৮

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উপর দৃঢ় ঈমানের অধিকারী লোকদেরই যুগে যুগে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আর এ পরীক্ষায় উত্তীর্র্ণ হওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের জন্য রয়েছে পরকালীন জীবনের জান্নাত নামক সফলতার মুকুট।

মহান আল্লাহ বলেন-“মানুষ কি (এটা) মনে করে নিয়েছে, তাদের (শুধু) আমরা ঈমান এনেছি (এটুকু) বলার কারণেই ছেড়ে দেয়া হবে এবং তাদের কোনো (রকম) পরীক্ষা করা হবে না। আমি তো সেসব লোকদেরও পরীক্ষা করেছি যারা এদের আগে এ ভাবেই ঈমানের দাবি করে ছিলো, অত:পর আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তাদের ভালো করে জেনে নিবেন যারা (ঈমানের দাবিতে) সত্যবাদী, (আবার ঈমানের) মিথ্যা দাবিদারদেরও তিনি অবশ্যই জেনে নিবেন”। সূরা আনকাবুত:২-৩

আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাহদেরকে অনেক সময় এমন ভাবে পরীক্ষা করেন যে জাগতিক দৃষ্টিতে উক্ত পরীক্ষার উপকারিতা বুঝা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। জাগতিক দৃষ্টিতে অকল্যাণকর মনে হলেও মূলত: তার মাঝে কল্যাণই নিহিত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের কল্যাণের জন্যই পরীক্ষায় ফেলেছেন। হয়তবা আমাদের সীমিত জ্ঞান-বুদ্ধির কারণে আমরা উক্ত কল্যাণ বুঝতে পারি না। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “তোমরা এমন জিনিসকে অপছন্দ করছ, আল্লাহ যাতে অনেক মঙ্গল রেখে দিয়েছেন”। সূরা নিসা:১৯

কোন বিষয় তোমাদের কাছে অপছন্দ অথচ সেটাই তোমাদের জন্য ভালো। আর এ-ও হতে পারে যে, কোন জিনিস তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ সেটা তোমাদের জন্য মন্দ। আল্লাহ তায়ালাই সবচাইতে ভালো জানেন, তোমরা কিছুই জানো না। সূরা বাকারা:২১৬

বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা বর্তমানে যে জুলুম নিপীড়নের শিকার হয়েছে অতীতে কখনো এত জুলুম-নিপীড়নের শিকার এ আন্দোলনের কর্মীদের হতে হয়নি। তবে জুলুমের মাত্রা যতই কঠিন হোক আন্দোলনের কর্মীদের তা মানার মত মানসিকতা ইতিমধ্যেই তৈরী হয়ে গেছে। কারণ আমরা জেনে বুঝে স্বজ্ঞানেই এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছি। কারণ জুলুম-নিপীড়ন সহ্য করার মধ্য দিয়েই আল্লাহর করা পরীক্ষায় উত্তীর্র্ণ হয়ে সফলতা লাভ করার সুযোগ তৈরী হয়। রাসূল (সা:) বলেছেন- বিপদ ও পরীক্ষা যত কঠিন হবে, তার প্রতিদান ও তত বড় হবে। আর আল্লাহ তায়ালা যখন কোন সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন; তখন তাদের পরীক্ষায় ফেলেন। যে ব্যক্তি (পরীক্ষায় সম্মুখীন হয়ে) খুশী থাকে, আল্লাহও তার উপর খুশী হন। আর যে অসন্তুষ্ট হয়, আল্লাহ ও তার উপর অসন্তুষ্ট হয় (তিরমিযী)। রাসূল (সা:) বলেছেন, মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে যখন দ্বীনদারের জন্য দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা জ্বলন্ত অঙ্গার হাতে রাখার মত কঠিন হবে। -তিরমিযী

আমাদের আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আজ শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলনে ভূমিকা রাখার কারণে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বছরের পর বছর কারান্তরীণ থেকে ঈমানের পরীক্ষা দিয়ে চলছেন। ইতিমধ্যেই চুড়ান্ত পরীক্ষায় সফল হয়ে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন আমাদের প্রিয় নেতা শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা। ৯২ বছরের অশীতিপর বৃদ্ধ অধ্যাপাক গোলাম আযম শুধুমাত্র দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ভূমিকা রাখার কারণে মিথ্যা-অপবাদ দিয়ে দলীয় ট্রাইবুনালের মাধ্যমে তাকে ৯০ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। বিশ্ববরণ্যে এই ইসলামী চিন্তবিদ তার রবকে খুশী করার জন্য নীরবে নিভৃতে বাতিলের জুলুম-নিপীড়নকে সহ্য করে গেছেন। বৃদ্ধ বয়সে প্রায় ৩ বছরের মত সময় কারাগারে থেকে গত ২৩ অক্টোবর’১৪ রাত ১০ টায় তিনি বন্দী থাকা অবস্থায় মহান প্রভ’র সান্নিধ্যে চলে যান। দীর্ঘ ৫০ বছর কোরআনের খেদমত কারী আন্তর্জাতিক মোফাফসিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দ্বীনের পথে অবিচল থাকতে গিয়ে জুলুম-নিপীড়নকে হাসি মুখে মেনে নিয়েছেন। মিথ্যা অভিযোগে ট্রাইবুনাল শুরুতে তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করলেও পরবর্তীতে আপীল বিভাগের রায়ে তার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদন্ডের রায় প্রদান করা হয়। দেশের তৌহিদী জনতা এ রায়কে মেনে নিতে পারেনি। তৌহিদী জনতার বিক্ষোভ দমনে সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ইসলাম প্রেমিক ২ শতাধিক নারী-পুরুষকে পাখির মতি গুলি করে হত্যা করেছে। বছরের পর বছর কারা নির্যাতন ভোগ করে চলছেন আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ আরো অনেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

যারা আজ ক্ষমতার মসনদে বসে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের উপর অন্যায় জুলুম-নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছেন দুনিয়ায় আদালতে তাদের বিচার না হলেও আল্লাহর আদালতে তাদের জুলুমের বিচার হবে। তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জালিমকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। আল্লাহ বলেন- ‘আল্লাহ যদি মানুষকে তাদের জুলুমের কারণে সাথে সাথেই পাকড়াও করতেন তাহলে দুনিয়ার কোন একটি প্রাণীকেও ছেড়ে দিতেন না। কিন্তু তিনি সবাইকে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত আবকাশ দিয়ে থাকেন। যখন ঐ সময় এসে যায় তখন এক মূহুর্তও আগে বা পরে হতে পারে না।’ সুরা নাহল-৬১

ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসাবে আমাদের মনে রাখতে হবে রাতের আধাঁর যত গভীর হয় ভোরের সূর্য উঠার সময় তত ঘনিয়ে আসে। নদীতে কখনও জোয়ার আসে আবার কখনও ভাঁটা আসে। সব সময় বাতাস একদিকে প্রবাহিত হয়না বা বাতাসের গতি সব সময় সমান থাকে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সব সময় তাঁর প্রিয় বান্দাদের বিপদে রেখেই খুশি হন বিষয়টা এমন নয়। তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের আরও বেশি প্রিয়পাত্র বানাবার জন্য পরীক্ষা করেন। এক্ষেত্রে কাউকে একটু বেশি পরীক্ষা করেন আর কাউকে একটু কম করেন। এমতাবস্থায় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের তাঁর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন “হে রাসূল! ওদেরকে বলুন ‘আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা ছাড়া কখনো কোন (ভালো বা মন্দ) কিছুই আমাদের কাছে পৌঁছে না। তিনিই আমাদের মনিব। মুমিনদেরকে আল্লাহরই উপর ভরসা করা উচিৎ’। সূরা তওবাহ-৫১

বিপদাপদ ও জুলুম নিপীড়নে ঘাবড়ে না গিয়ে আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করতে হবে। আল্লাহ বলেন- ‘যে নিয়ামতই তোমরা পেয়েছ, তা আল্লাহর পথ থেকেই এসেছে। তারপর যখন তোমাদের উপর কোন কঠিন সময় আসে তখন তোমরা ফরিয়াদ নিয়ে তাঁরই দিকে দৌঁড়াও”। সূরা নাহল: ৫৩

দ্বীনের পথে শত প্রতিকুলতার মাঝেও অটল অবিচল থাকার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। রাসূল (সা:) এর প্রিয় সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন হুজায়ফা (রা:) কে রোম স¤্রাট নানা প্রলোভন দেখিয়েও যখন দ্বীনের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি তখন জ্বলন্ত ডেকচিতে আব্দুল্লাহ বিন হুজায়ফাকে ফেলার জন্য নিয়ে আসলে তাঁর চোখে অশ্রুফোঁটা আসল। জল্লাদরা ভেবেছিল মৃত্যুর ভয়ে হুজায়ফা কাঁদছে । তাই তারা পুনরায় তাকে রোম স¤্রাটের কাছে নিয়ে গেলে তিনি বললেন-“আমি ভেবেছিলাম তোমরা অনেকগুলো ডেকচি উত্তপ্ত করবে এবং আমাকে আরও নির্মম ভাবে হত্যা করবে আর আমি শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভ করবো”। আমি এ জন্য কেঁদেছি যে, তোমরা বেশি ডেকচি উত্তপ্ত করনি। ফলে আমি আমার কাক্সিক্ষত মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি কিনা এ কথা ভেবে কাঁদছি। সুতরাং আন্দোলনের কর্মীদের কোন অবস্থায় হতাশ হওয়া যাবে না। জুলুম নিপীড়নের মোকাবিলায় সবর ও দৃঢ়তা অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহ বলেন- “হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছ। সবর করো বাতিল পন্থীদের বিরুদ্ধে মজবুতি দেখাও, হকের খিদমতের জন্য তৈরী থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে অবশ্যই তোমরা সফলকাম হবে”। সূরা আল ইমরান-২০০

আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, অতীতে যারা জালিমের ভূমিকায় ছিল, আজকেও তাদেরকে মানুষ স্মরণ করে ঘৃণার সাথে। আর যারা মাজলুম ছিলেন তাঁরা শতাব্দীকাল থেকেই সম্মান ও মর্যাদার সাথেই মুসলিম উম্মাহর মন ও মননে রয়েছেন। মাজলুমের জন্য আজকে যেমন কোটি কোটি মানুষ চোখের পানি ফেলে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছে, তেমনি ভাবে অনাগত ভবিষ্যতেও তাঁরা কোটি কোটি মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হিসাবে থাকবে। যে আব্দুল কাদের মোল্লাকে আওয়ামী সরকার জুডিশিয়াল কিলিং করে শহীদ করেছে সে আব্দুল কাদের মোল্লার জন্য দেশ-বিদেশে কোটি কোটি মানুষ চোখের পানি ফেলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার জন্য গায়েবানা জানাজা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এ জুলুমকে সহ্য করতে পারেনি। তাই তারা ধীরে ধীরে এ আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল হচ্ছে। বাংলাদেশের তৌহিদী জনতার মনের মণিকোঠায় আজ জুলুম-নিপীড়নে নির্যাতিত-নিষ্পেষিত ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অবস্থান। রাত জেগে জেগে তারা আন্দোলনের কর্মীদের জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে চলছে। কাবাঘরের গিলাফ ধরে আন্দোলন ও তার কর্মীদের জন্য দোয়া করছে। যে জনপদে অন্যায় ভাবে আল্লাহর দ্বীনের সৈনিককে শহীদ করা হয়েছে সে জনপদ সময়ের ব্যবধানে ইসলমী আন্দোলনের দুর্গে পরিণত হচ্ছে। জালিমরা জুলুম করে আল্লাহর দ্বীনকে নির্বাপিত করতে চায় আর আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে জুলুম-নিপীড়নের মধ্য দিয়েই তার দ্বীনের নুরকে তিনি প্রজ্জলিত করবেন। মহান আল্লাহর ঘোষণা- তারা (কাফেররা) মুখের ফুঁৎকারেই আল্লাহর নূর নিভিয়ে দিতে চায়; অথচ আল্লাহ তাঁর এ নূর পরিপূর্ণ করে দিতে চান; তা কাফেরদের কাছে যতোই অপছন্দনীয় হোকনা কেন”। সূরা আস্ সফ :৮

আমাদের প্রিয় নেতা অধ্যাপক গোলাম আযমকে বাংলাদেশের সরকার ও ইসলাম বিদ্বেষী মিডিয়া যে রুপে চিত্রায়িত করেছিল এবং দীর্ঘকাল পর্যন্ত তাকে যেভাবে গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছিল তার ইন্তেকালের পর প্রমাণিত হয়েছে তাকে নিয়ে সরকারের নেয়া সকল পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। দেশ বিদেশে অধ্যাপক গোলাম আযমের জনাজায় যে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছে তা ইতিপূর্বে বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক নেতার ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। অধ্যাপক গোলাম আযমের প্রতি বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর যে ভালবাসা তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।

সুতরাং সকল অপপ্রচার, অপবাদ, জুলুম-নিপীড়নের মধ্যে থেকেও আমাদেরকে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করে যেতে হবে। আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের জন্য আমাদের সময়-সামর্থ, ধন-মাল ও দেহ-প্রাণের সকল শক্তি এবং মন-মস্তিস্কের পরিপূর্ণ যোগ্যতা ব্যয় করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- “হে রাসূল! (আপনি তাদেরকে) বলুন, তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের ঐ মাল যা তোমরা কামাই করেছ, তোমাদের ঐ কারবার তোমরা যার মন্দার ভয় করো এবং তোমাদের ঐ বাড়ি, যা তোমরা পছন্দ করো (এসব) যদি তোমাদের কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদের চেয়ে বেশী প্রিয় হয় তাহলে আল্লাহর ফয়সালা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আল্লাহ ফাসিক লোকদের হেদায়াত করেন না”। সূরা তওবাহ :২৪

সুতরাং ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে সকল পরিস্থিতিতেই ধৈর্য্য, হিকমত ও সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে। আল্লাহর উপর ভরসা করে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সকল পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রচেষ্টা অব্যহত রাখতে হবে। সময়ের ব্যবধানে জুলুম-নিপীড়নের অমানিশা ছেদ করে প্রজ্জলিত হবে শক্তির আলোকময় ধ্রুবতারা। আর সে আলোক-উজ্জল স্বপ্নীল সমাজ গঠনের মধ্য দিয়েই আসবে আন্দোলনের সফলতা।

সহিংসতা মুসলমানের কাজ নয়

ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম মানবজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। শান্তি, স্থিতি ও সমৃদ্ধির জন্য যেসব কাজ হুমকি তা ইসলামে নিষিদ্ধ। বিশেষত জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং মানুষের জান-মালের ক্ষতি হয় এমন সহিংস ও বিধ্বংসী যেকোনো কাজ ইসলাম প্রত্যাখ্যান করে।পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ ‘ফ্যাসাদ’ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সহিংস রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক কাজগুলো এর অন্তর্ভুক্ত।
ফ্যাসাদের অর্থ
কোরআনে নিষিদ্ধ ফ্যাসাদের শাব্দিক অর্থ কল্যাণের পরিপন্থী কাজ করা। মানুষের জন্য কল্যাণকর নয় জেনেও কোনো কাজ করলে তা ইসলামের দৃষ্টিতে ফ্যাসাদ এবং তা শরিয়তে নিষিদ্ধ।আল্লামা ইবনুল জাওজি (রহ.) বলেন, ‘কোনো জিনিসের কল্যাণকর অবস্থা পাল্টে দেওয়া।’
অর্থাৎ স্বাভাবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা পাল্টে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। (নুজহাতুল আ’য়ুন, পৃষ্ঠা ৪৬৯)
ফ্যাসাদের চেয়ে গুরুতর ইফসাদ। তা হলো মন্দ উদ্দেশ্যে কোনো বিষয়কে স্বাভাবিক ও কল্যাণকর অবস্থা থেকে বের করে অস্বাভাবিক ও ভীতিকর অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়া।(আল-কুল্লিয়াত, পৃষ্ঠা ২২০)
সুতরাং সহিংস ও বিশৃঙ্খল আচরণ, কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচি ফ্যাসাদ ও ইফসাদের অন্তর্ভুক্ত।
সহিংসতা মুসলমানের কাজ নয়
কোরআন ও হাদিসের আলোকে সহিংসতা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণগুলো তুলে ধরা হলো—
১. আল্লাহ সহিংসতা অপছন্দ করেন : আল্লাহ সহিংস ও ধ্বংসাত্মক কাজ পছন্দ করেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়; আল্লাহ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্তদের ভালোবাসেন না।’
(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৬৪)
২. সহিংস ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত : যারা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে দেশ ও জাতির ক্ষতি করতে চায়, শেষ পর্যন্ত তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।’
(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৭)
৩. সহিংসতা মুনাফিকদের কাজ : কোরআনে সহিংসতাকে মুনাফিক বা কপট লোকদের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদেরকে বলা হয়, পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি কোরো না, তারা বলে আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী। সাবধান! তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী। কিন্তু তারা বুঝতে পারে না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১১-১২)
৪. কল্যাণের পরিপন্থী : সহিংসতা সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করে, যা কল্যাণের পরিপন্থী কাজ। আল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন, ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না, তাঁকে (আল্লাহকে) ভয় ও আশার সঙ্গে ডাকবে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৬)
৫. সহিংসরা কল্যাণকামী নয় : যারা সমাজে সহিংসতা সৃষ্টি করে তারা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকামী নয়। কেননা কল্যাণকামিতা ও সহিংসতা কখনো এক হতে পারে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ জানেন কে কল্যাণকামী এবং কে অনিষ্টকারী।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২২০)
ক্ষমতার জন্য সহিংসতা বেশি নিন্দনীয়
ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য সহিংসতায় লিপ্ত হওয়া আরো বেশি নিন্দনীয়। যারা এমন করবে পরকালে তাদের কোনো অংশ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘এটা আখিরাতের সেই আবাস, যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য, যারা এই পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। শুভ পরিণাম আল্লাহভীরুদের জন্য।’
(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৮৩)
রাষ্ট্রের আছে আইন প্রয়োগের অধিকার
যারা সহিংসতার মাধ্যমে দেশ ও সমাজে ত্রাস সৃষ্টি করতে যায় এবং মানুষের জীবন ও সম্পদ নষ্ট করে, তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের অধিকার আছে রাষ্ট্রের। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায় এটাই তাদের শাস্তি যে…।’
(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩৩)
তবে রাষ্ট্র সংযত আচরণ করবে
সহিংসতা রোধে ইসলাম রাষ্ট্রকে আইন প্রয়োগের অধিকার দিলেও তা প্রয়োগে সংযত ও সচেতন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। যেন তারা নিজেরাই সহিংস হয়ে না ওঠে এবং প্রতিপক্ষকে দমন করতে অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার না করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে (কি) ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ২২)
রাষ্ট্র অসংযত হলে বিপর্যয় অনিবার্য
সাধারণ মানুষ অসংযত ও সহিংস হলে যতটা ক্ষতি হয়, রাষ্ট্র সহিংস আচরণ করলে ক্ষতির পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যায়। পবিত্র কোরআনে সে দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, ‘রাজা-বাদশাহরা যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদের অপদস্থ করে।’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৩৪)
সহিংসতা রোধে করণীয়
সাধারণ নাগরিক সহিংসতা রোধে নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে পারে। তা হলো—
১. সচেতনতা তৈরি : সহিংসতা রোধে সাধারণ মানুষ নিজে সচেতন থাকবে এবং অন্যকেও সাবধান করবে নতুবা সমাজের বিপর্যয় রোধ করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের পূর্বযুগে আমি যাদের রক্ষা করেছিলাম তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ছাড়া সজ্জন ছিল না, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাতে নিষেধ করত।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৬)
২. সহিংসতা রোধে সহযোগিতা করা : সমাজ ও রাষ্ট্রে সহিংসতা রোধে কল্যাণকামীরা পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। কেননা আল্লাহ কল্যাণের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎকাজ ও আল্লাহভীতিতে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য করবে এবং পাপ ও সীমা লঙ্ঘনে পরস্পরকে সাহায্য করবে না।’
(সুরা : মায়িদা, আয়াত :২)
৩. আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া : মুমিন সর্বোপরি দেশ ও জাতির শান্তি, কল্যাণ ও স্থিতি কামনা করে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য কোরো।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৩০)
আল্লাহ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সব ধরনের সহিংসতা ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

Chat On WhatsApp

Please Contact with us for more details.
Our Services

Phone : +8801566058831
WhatsApp :�wa.me/8801933307999
Skype : azadarch
Our Website : www.azadservice.com
Telegram for more information : https://t.me/Azadservice
Email US : azadarc@gmail.com
Youtube :� https://www.youtube.com/@DropshippingService?sub_confirmation=1
Virtual Assistant : www.azadservice.com/category/virtual-assistant/
Facebook Groups : https://www.facebook.com/groups/854505676275341/
Facebook Page : https://www.facebook.com/independentservice.today
Linkdin :� https://www.linkedin.com/in/azadservice/
Instagram : https://www.instagram.com/azadservicebd/

Pinterest : https://www.pinterest.com/azadservice/

Twitter.: https://twitter.com/azadservicebd

Tiktok : https://www.tiktok.com/@azadservices

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours